আ.লীগকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার আবেদন

 হাইকোর্টে পিটিশন করেন ৩ ছাত্রনেতা


ছবি- হাইকোর্ট 


 আ.লীগকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার আবেদন



 আওয়ামী লীগ ও এর কয়েকজন সহযোগীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে আদালতের সহায়তা নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা।  এ ছাড়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করারও অনুরোধ করেছেন তিনি।


 বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম, আবুল হাসনাত (হাসনাত আবদুল্লাহ) ও হাসিবুল ইসলাম এ বিষয়ে হাইকোর্টে পৃথক দুটি আবেদন করেছেন।


 রিট আবেদনে আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।  এ বিষয়ে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে।  দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অসাংবিধানিক দখলের অভিযোগ রয়েছে।


  আরেকটি রিটে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন বিচারবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।  ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের এসব নির্বাচনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে।  এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার গতকাল সন্ধ্যায় বলেছে, বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।  রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকার শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।  সরকার এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি।  উল্লেখ্য, ছাত্রনেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৩ অক্টোবর এক নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে।  তার নিষেধাজ্ঞার আদেশে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের উল্লেখ রয়েছে, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর গত ১৫ বছরে।


এর আগে গত ২২ অক্টোবর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার জনসভা কর্মসূচিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে।  এর মধ্যে একটি ছিল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা।  দ্বিতীয় দাবি হলো ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করা এবং ওই তিনটি নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং পরবর্তী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।


 রিটের শুনানি বিচারাধীন


 সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চের গতকালের কার্যতালিকায় ২৮৩ ও ২৮৪ নম্বরে রিটটি ছিল।  বিকেলে ফলাফল কক্ষে দেখা যায়, উভয় রিটেই 'আউট' লেখা রয়েছে।  গতকাল দুপুরে রিট দুটি কার্যতালিকায় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।   তবে রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, বিচারপতি ফাতেমা নাজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চের ২০৮ ও ২০৯ নম্বর রিট কার্যতালিকায় রয়েছে।  এ কারণে মঙ্গলবার হাইকোর্টের এই বেঞ্চে রিটের শুনানি হতে পারে।


 আ.লীগ ও মিত্রদের বিরুদ্ধে আর.জি


 আওয়ামী লীগ ছাড়াও যে ১০টি দলকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো- জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।  বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী (বড়ুয়া) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল।


 নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অভিযোগে আওয়ামী লীগসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আদেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।   ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আগামীতে কেন দলগুলোকে সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করা হবে না, সে বিষয়েও রায় চাওয়া হয়েছে রিটে।  মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া যাবে না বলে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রায়ে।


ফেসবুকে আমার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পোস্ট ব্রাউজারে বৈষম্যমূলক জিহাদ নিয়ে লেখালেখির কথা বলছে ছাত্র আন্দোলন সরবসার আলম ও হাসনাত আবদ নেটওয়ার্ক।


 ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগসহ ১৪টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।  এছাড়া তিনি জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলকেও জোটভুক্ত করেন।  আর জোটগুলো তাদের প্রার্থী নিয়ে আসন নিয়ে একমত হয়েছে।  বিভিন্ন সময়ে সহকারীরা মন্ত্রিসভার সদস্য হন।


 তবে রিটে কোন দলকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।  আরও বলা হয়েছে, রিটে উল্লেখিত আপত্তিগুলোর যে কোনোটিই অমূলক বলে প্রমাণিত হয়েছে।  কমিশন পার্টি (CP কোম্পানি) এর সাথে চূড়ান্ত চুক্তির মাধ্যমে আপনার অভিযোগ বিবেচনায় অংশগ্রহণ করতে পছন্দ করুন।


 সিপিবি জেনারেল রুহিন সিগন্যাল প্রিলি প্রথম আলোকে বলেন, বিপ্লব নামকরণ রিটেন অনলাইন মিডিয়া ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে কথা বলেছেন।  তবে সিপিবির সাথে এ ধরনের সহযোগিতা অনিবার্য।  তিনি বলেন, এর আগেও দলীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে।  এরকম কিছু হলে মানুষের বেলায়ও হবে।


  ২০০৯ সালের পরের পরিস্থিতির মতো রিটে টাস্কফোর্সের নাম নেই।  দলের নেতা রশিদ খান মইনকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ভাবা হচ্ছে।


 আর অলি আহমেদের সম্মানে লিবারেল লিবারেল লিবারেল পার্টি নামের দলটি ২০১২ সাল থেকে মিত্র বা মিত্র ছিল।  রিটের জবাবে নাম উল্লেখ করা।  একটি প্রতিক্রিয়া গুরুতর আচরণ বলা হয়, যে স্বৈরাচারী আন্দোলন কর্ন (অব.) আলী আহমেদ এবং এলডিপির বিবরণ সম্পর্কে জানেন না, তিনি আর-ই-প্রতিভা এবং রাজনীতির ব্যক্তি হতে পারেন না।  এলপিডি সারজিস আলম ও হাসনা আবদকে অলি আহমেদসহ আমার পক্ষে আবেদন করতে বলে।


গত তিন নির্বাচন নিয়ে রিট


  রিটে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন আল্ট্রা ভাইয়ার ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।   2014, 2018 ও 2024 সালের নির্বাচনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে।


  এ রিটে আইনসভা সচিব, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি। , বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী (বড়ুয়া) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলকে উত্তরদাতা করা হয়েছে।


  রিট আবেদনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই সব দলের মনোনয়নের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।   সংসদের নির্বাচিত তিন সদস্যকে বরাদ্দ দেওয়া প্লট বাতিলের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা যানবাহনের ট্যাক্স ও চার্জ উদ্ধার করা উচিত এবং পারিশ্রমিক ও ভাতা দেওয়া উচিত-এর কারণও চাওয়া হয়েছে আবেদনে প্রত্যাহার করা


  এর আগে আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা ও দলের নিবন্ধন বাতিল চেয়ে রিট করেছিল ‘সারদা সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন।   গত ১৯ আগস্ট সারদা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া রিটটি করেন।   গত ১ সেপ্টেম্বর ওই রিট সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।


  2018 সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিল


  2018 সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।   আগের মতোই আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটে এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যদের সঙ্গে মিত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়।   বিএনপিসহ অনেক সরকারবিরোধী দল।   কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেন।


আগের রাতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে দেওয়ায় এই নির্বাচনকে 'নাইট ভোট' বলা হয়।  দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়ে আবারও সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।  জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আটটি আসনে জয়ী হয়েছে।  সংরক্ষিত নারী আসনসহ বিএনপির ৭ জন সংসদ সদস্য ছিল।  তবে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির এমপিরা একসঙ্গে পদত্যাগ করেন।


 ৫ আগস্ট ছাত্রদের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে ও পরে দলটির অনেক বড় নেতা দেশ ছেড়েছেন।  দেশে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।  অনেকে লুকিয়ে আছে।


 মোহাম্মদ যখন সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান, তখন ছাত্রনেতারা আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের বাইরে রাখার জন্য লেখেন।  সাহাবুদ্দিনকে সরাতে নানা তৎপরতা চলছে।  সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করতে চান ছাত্রনেতারা।  সাংবিধানিক শূন্যতার ভয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এতে রাজি নয়।  এ বিষয়ে ছাত্র নেতারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছেন।



Post a Comment

0 Comments